উরবান উস্তাদ- A great inventor in 14th

3.7/5 - (6 votes)

উরবান উস্তাদ, নামটি শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে ইতিহাস খ্যাত কনস্টান্টিনোপলের অবরোধের সেই বিশাল কামান। এই কামানটি তৈরি করেছিলেন একজন বিশিষ্ট ধাতুবিশারদ ও প্রকৌশলী, যাকে ইতিহাসে উরবান উস্তাদ নামে স্মরণ করা হয়। চৌদ্দশো শতকের তুর্কি সুলতানের জন্য নির্মিত এই কামানটি মধ্যযুগের সামরিক প্রযুক্তির একটি চমৎকার উদাহরণ। আজকের এই লেখায় আমরা উরবান উস্তাদের জীবন, কাজ এবং তাঁর অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

উরবান উস্তাদ

উরবান উস্তাদের পরিচয়ঃ

উরবান উস্তাদের ব্যাপারে ইতিহাসে খুব বেশী কিছু উল্ল্যেখ নেই। তবে যেটুকু জানা যায় এবং ঐতিহাসিক গণের গবেষণায় দেখা যায় যে তিনি একজন মুসলিম বিজ্ঞানী ও প্রকোশৌলী হবার কারণে তখনকার যুগে উহুদি ও খ্রীষ্টান দের দ্বারা বৈষ্যম্যের শিকার হয়েছিলেন। এজন্য ইতিহাসের পাতায় তার স্থান হয়নি। তবে এত বছর পরে এসেও তিনি অনেক বৈজ্ঞানিক আলোচনায় বেশ সম্ভ্রমের সহিত আলোচিত হয়ে থাকেন।

প্রাচীন মধ্যযুগীয় ইতিহাস ঘেটে যতটা দেখা যায় তাতে আমরা জানতে পারি তার জন্ম হয় ১৩০০ শতকের মাঝামাঝিতে অথবা শেষের দিকে। তার জাতীয়তা বা জন্মস্থান নিয়ে ইতিহাসবেত্তা দের মধ্যে যদিও কিছুটা মতবিরোধ রয়েছে তারপরেও ধারণা করা হয় তার জন্ম হয় হাঙেরিয়ায় এবং জন্ম সূত্রে তিনি ছিলেন একজন হাঙ্গেরিয়ান। এবং কারো কারো মতে তার শরীরে ছিলো পূর্ব জার্মান রক্ত।

এছাড়াও কিছু তত্ব অনুসারে তিনি ছিলেন ওয়ালাচিলান অর্থাৎ লাওকোনিস নামক এক ঐতিহাসিক তার বর্বণায় উরবান উস্তাদ ছিলেন ‘ডেচিয়ান’ বংশোদ্ভূত

উরবান উস্তাদের উসমানিয় রাজ্যে আগমণঃ

উরবান উস্তাদ কীভাবে এবং কখন উসমানীয় সাম্রাজ্যে এসেছিলেন তা কারো নিকট স্পষ্ট নয়। তবে উসমানীয় সম্রাজ্যে তার আগমণ এর সময় যাই হোকনা কেন তিনি তাঁর নির্মিত কামানের কারণে তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন।

কামান ছাড়াও তার আবিষ্কৃত অনেক উপকরণ তখন কার উসমানীয় খেলাফতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তিনি ছিলেন একজন ধাতু বিশারদ ও আবিষ্কারক।

উস্তাদ উরবানের রাজনৈতিক জীবনঃ

উসমানীয় খেলাফতে অংশ গ্রহণ করার আগে তিনি বাইজেন্টাইন অধিপতি সম্রাট একাদ্বশ কনস্টাইন এর দরবারে কাজের জন্য আবেদন জানান। কিন্তু তখনকার সময়ে নতুন বলে কেউ তাকে তেমন কদর করতেন না। এবং বিশেষ করে উল্লেখ জনক কিছু আবিষ্কারের আগেই সম্রাটের দরবারে মোটা অঙ্গকের বেতন দাবী করে চাকরিতে যোগ দান করার ইচ্ছার কারণে সম্রাট একাদ্বশ কনস্টাইন তাকে চাকরিতে বহাল করার ব্যাপারে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।

এছাড়াও তার সেই ঐতিহাসিক আবিষ্কার বিরাট কামান নির্মাণের জন্য প্রয়োজণীয় উপকরণ বিশেষ ধাতু এবং অন্যন্য জিনিস এর যোগান দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এজন্য তিনি তার যোগ্য স্থান খুজে পেতে উসমানীয় খেলাফতে পাড়ি জমান।

উরবান উস্তাদের উসমানী খেলাফতে যোগদানঃ

বাইজেন্টাইন সম্রাট কন্সটাইন এর দরবারে হতাশ হয়ে ফেরার পর তিনি আবিষ্কারের নেশায় উসমানীয় খেলাফতের দ্বিতীয় সুলতান মুহম্মদের কাছে যান।

তিনি সুলতানের কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে তার দক্ষতা কলা প্রকাশ করেন। তিনি সুলতান কে বলেন যে তিনি প্রয়জনীয় উপকরণ পেলে এমন এক বিধ্বংসী কামান আবিষ্কার করতে পারবেন যা এযাবৎ আবিস্কার করা সকল কামানের চেয়ে বিধ্বংসী প্রমাণিত হবে।

তিনি আরও বলেন যে তাকে সুযোগ দেয়া হলে তিনি এমন এক কার্যকর হাতিয়ার তৈরী করবেন যা দিয়ে ব্যবিলনের দেয়াল পর্যন্ত গুড়িয়ে দিতে পারবেন চোখের পলকে।

তার কথা শুনে সুলতান দ্বিতীয় মুহম্মদ তাকে অস্ত্রাগারের দায়িত্বে নিযুক্ত করেন এবং সেখানে তাকে তার চাহিদা মাফিক সকল উপকরণ এনে দেয়ার ব্যবস্থা করেন।

উরবান উস্তাদ এর বিখ্যাত কামান আবিষ্কারঃ

উসমানীয় খেলাফতে নিযুক্ত হয়ার পর সুলতানের নিকট তার প্রয়োজনীয় জিনিস চাইলে সুলতান তাকে খুবই স্বল্প সময়ে তার চাহিদা মাফিক জিনিস পত্র ব্যবস্থা করে দেন। উপকরণ ও ভালো বেতন পাবার পর তিনি কয়েক জন সহকারি কে সাথে নিয়ে কামান তৈরীর কাজ শুরু করেন।

এবং দিন রাত নিরলস পরিশ্রম এবং মেধা খাটিয়ে মাত্র তিন মাসের মধ্যেই তিনি তার বিখ্যাত এড্রীনোপল কামান টি তৈরী করতে সক্ষম হন। এবং তখন থেকে সুলতান সহ রাজ্যের সকলের মন জয় করার পাশাপাশি যুদ্ধাস্ত্র তৈরীতে পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করান।

কামানটির বৈশিষ্ট্যঃ

উরবান উস্তাদের তৈরী কৃত কামান টী এতটাই বড় এবং ভারী ছিলো যযে এটি যুদ্ধের স্থানে নিয়ে যেতে ৬০ টি ষাড় এর প্রয়োজন হয়েছিল। এই কামানটি এত বড় ছিল যে এটি একটি গাড়ির উপর বসিয়ে টেনে নিয়ে যেতে হতো। কামানটিতে বিশাল বিশাল গোলা নিক্ষেপ করা হতো, যা শহরের প্রাচীর ভেঙে ফেলার ক্ষমতা রাখত।

কনস্টান্টিনোপলের অবরোধ এবং উরবানের কামানঃ

১৪৫৩ সালে উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মুহম্মদ কনস্টান্টিনোপল শহর অবরোধ করেন। যুদ্ধ জয়ের জন্য শহরের প্রাচীর ভেদ করা ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই অবরোধে শহরের প্রাচীর ভেঙে ফেলার জন্য একটি বিশাল কামানের প্রয়োজন ছিলো। এখানেই উরবানের সেই কামান তার কার্যকারিতা প্রদর্শন করে।

এই কামানের আঘাতে শহরের প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত উসমানীয়রা শহর দখল করে নেয়। কনস্টান্টিনোপলের পতন ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং উরবানের নির্মিত কামান এই ঘটনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

উরবান উস্তাদের মৃত্যুঃ

উরবান উস্তাদের মৃত্যু সম্পর্কেও বিশেষ ভাবে জানা যায়না, তবে অনেকের মতে তিনি ১৪৫৩ খ্রীষ্টাব্দে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কামান বিষ্ফোরণে পতিত হ্যে গুরুতর আহত হন।

পরে সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং আরোও অনেক যুদ্ধাস্ত্রের যগান দেন উসমানীয় খেলাফত কে। এছাড়াও তিনি অনেক সাধারণ কামান ও তৈরী করতেন।

এবং এক সময় যুদ্ধের ময়দানেই তিনি শহিদ হন।

বিজ্ঞানে উরবান উস্তাদের অবদানঃ

উরবান একজন মহান প্রকৌশলী ছিলেন। তাঁর নির্মিত কামানটি মধ্যযুগের সামরিক প্রযুক্তির একটি চমৎকার উদাহরণ। তাঁর কাজের ফলে যুদ্ধের ধরন পরিবর্তিত হয়েছিল। তিনি একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন, যেখানে আগ্নেয়াস্ত্রের গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছিল।

উরবানের অবদান কেবল সামরিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি একজন দক্ষ ধাতুবিশারদ ছিলেন এবং তিনি ধাতুর ওপর বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। তাঁর এই জ্ঞান ধাতুবিদ্যার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

শেষ কথাঃ

উরবান উস্তাদ একজন অবিস্মরণীয় প্রকৌশলী ছিলেন। তাঁর নির্মিত কামানটি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁর অবদান সামরিক ক্ষেত্রে এবং ধাতুবিদ্যার ক্ষেত্রেও ছিল উল্লেখযোগ্য। আজও আমরা তাঁর কাজের প্রশংসা করি।

মনে রাখবেন:

  • উরবানের জীবন এবং কাজ সম্পর্কে অনেক তথ্যই এখনও অজানা।
  • ইতিহাসবেত্তাদের মধ্যে উরবান সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে।

Leave a Comment