কুকুর কামড়ানোতে যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশ গুলোর মতো বাংলাদেশেও একটি অন্যতম সমস্যা। তবে আমি মনে করি বাংলাদেশ ও ভারতে এই সমস্যাটি বেশী হয়ে থাকে। কারণ ইউরোপিয়ান দেশ গুলোতে মানুষ বেশ কুকুর প্রেমী। আমাদের দেশে সাধারণত কুকুর কে নিম্ন শ্রেণীর প্রাণি হিসেবে মানা হয়।
রাস্তা ঘাটে কিংবা বিভিন্ন বাজার ঘাটে অসংখ্য কুকুর ঘহুরে বেড়ায়। তাই কুকুর কামড়ানো বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে কুকুর কামড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা হলো কুকুরের কামড় শুধু ব্যথ্যার উদ্রেক ঘটায় এমনটা নয়, বরং জীবন নাশের কারণও হতে পারে। নেক সময় কামড়ের ফলে মারাত্নক গভীর ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, নেক বেশি রক্তক্ষরণ হতে পারে এবং এতে জটিল অনেক রোগের সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকতে পারে।
কুকুর কামড়ানোর সবচেয়ে ভয়ানক আশঙ্কা হল জলাতঙ্ক। কামড়ানো কুকুরটি যদি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে কামড় খাওয়া ব্যক্তিরও জলাতঙ্ক হওয়ার বিস্তর সম্ভাবনা থাকে,জলাতঙ্ক একটি মারাত্মক রোগ। তাই কুকুরের কামড় এড়াতে বিশেষ ভাবে সচেতন থাকা এবং কুকুরের আশেপাশে চলাচলে সঠিকভাবে আচরণ করা খুবই জরুরি। কামড় খেলে অবিলম্বে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কুকুর কামড়ানো তে আপনি নিম্নলিখিত ৫টি emergency চিকিৎসা করতে পারেন:
১.কুকুর কামড়ানো ক্ষত পরিষ্কার করুন:
অনেক সচেতন থাকার পরেও যদি কুকুর কামড় দিয়েই ফেলে তবে তো আর আফসোস করে কাজ হবেনা, এজন্য ডাক্তারের কাছে নেয়ার আগে সম্ভব হলে ঘটনাস্থলেই কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা করালে বেশ ভালো ফল পাওয়া যাবে।
যেমন আগে না ঘাবড়িয়ে আতংকি না হয়ে জখম কতটা গুরুতর সেটার দিকে খেয়াল করতে হবে। পরিষ্কার পানি দিয়ে ক্ষত স্থানটি বেশ কয়েকবার ধুয়ে ফেলতে হবে। যদি সাবান থাকে তাহলে সাবান ব্যবহার করবেন ছাই বা অন্যন্য জিনিস ভূলেও ব্যবহার করবেন না। সবচেয়ে ভালো হয় স্যাভলন বা ডেটল জাতীয় এন্টিসেপটীক ব্যবহার করলে।
ধুয়ে ফেলার পর আলতো করে চাপ দিয়ে ক্ষতস্থানটি মুছে রক্ত বন্ধ করে যাতে আর রক্ত পাত না হয় তার জন্য সুতি কাপড় ব্যবহার করে ভালোভাবে বেধে দিতে হবে।
২.কুকুর কামড়ানো স্থানে রক্তপাত বন্ধ করুন:
কামড়ের ক্ষত যদি অনেক বেশি গুরুতর হয় আর একের অধিক হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি যে ভয়টি থাকে সেটি হলো অধিক রক্তপাত। অনেক বেশি রক্ত পাতের কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি বেশ দুর্বল হয়ে যেতে পারেন। এতে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
এজন্য রক্তপাত বন্ধ করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য প্রথমেই ভালো এবং পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে। এরপর ব্যান্ডেজ দিয়ে ভালোভাবে বেধে দিতে হবে যাতে রক্তপাত না হয়। তবে যদি ব্যান্ডেজ না পাওয়া যায় তাহলে পরিষ্কার কাপড় দিয়েই বেশ শক্ত করে বেধে দিয়ে রক্তপাত বন্ধ করতে হবে। যতক্ষণ রক্তপাত বন্ধ না হবে ততক্ষণ চাপ দিয়ে ধরে রাখতে পারবে।
মনে রাখবেন কোনো ভাবেই ক্ষতস্থানে কোনো কিছু দিয়ে খোচানো যাবেনা অথবা ক্ষতস্থানে কিছু প্রবেশ করানো যাবেনা।
৩.কুকুর কামড়ানো ক্ষতটি ঢেকে দিন:

এরপর যেই কাজটি করা তাৎক্ষণিক প্রয়োজন তা হচ্ছে ক্ষত স্থানটি ভালভাবে ঢেকে দেয়া। ক্ষতস্থানে কোনো প্রকার ধুলো ময়লা যেন না পড়ে তার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
কারণ ক্ষতস্থানে কোনো ময়লা পড়লে বা ধুলা বালি পড়লে সেটিতে সংক্রমণ হয়ে সমস্যা বৃদ্ধি করতে পারে। তাই ক্ষতস্থান কখনও খোলা রাখা যাবেনা। এছাড়াও জীবানু বহনকারী বিভিন্ন পতংগ এবং মাছি বসার কারণে অনেক রোগের ভাইরাস আক্রমণ করতে পারে।
এজন্য আক্রান্ত স্থান ঢেকে রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
৪.কুকুর কামড়ানো স্থানে থানাশক সেবন:
চিকিৎসা নিতে যদি বিলম্ব হয় কোনো কারণে তাহলে ব্যাথা থেকে মুক্তির জন্য প্রাথমিক ভাবে কিছু ঔষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
যেমন বাজারে অনেক প্রকার ব্যাথা নাশক মেডিসিন পাওয়া যায় সেগুলোর যে কোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন। আবার অনেক এলাকায় বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ দিয়ে তৈরী প্রাকৃতিক ব্যাথা নাশক ওষুধ ও পাওয়া যায়। ভেষজ উদ্ভিদের একটি বেশ ভালো দিক হলো এটির কোনো পারশ প্রতিক্রিয়া থাকেনা এবং বেশ ভালো কাজে দেয়।
আপনি চাইলে এরকম কিছু প্রাকৃতিক অথবা কৃত্রিম ব্যাথা নাশক ব্যবহার করে ক্ষতস্থানের ব্যথা নিরাময় করতে পারেন। এতে করে রোগী কিছুটা হলেও স্বস্তিঃ পাবেন।
৫.কুকুর কামড়ানোর পরে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান:
এতক্ষণ আমরা যে পয়েন্ট গুলো আলোচনা করলাম তা ছিলো প্রাথমিক পর্যায়ে করণীয় এবার যা বলব তা হচ্ছে আসল করণীয়। আর তা হচ্ছে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।
কেন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরী?
আমরা সকলেই জানি কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর জলাতঙ্ক একটি মারাত্মক মৃত্যুব্যাধি যার নিদ্রিষ্ট কোনো চিকিৎসা আজ অবধি নেই চিকিৎসা শাস্ত্রে। যেহেতু কুকুর প্রায় সর্বভুক প্রাণী এবং এরা ময়লা আবর্জনা তেই থাকতে পছন্দ করে।
তাই এদের মুখে অনেক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে। এসব ব্যাকটেরিয়া কামড়ের মাধ্যমে জখমে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এছাড়াও কুকুরের কামড়ে টিটেনাস হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। টিটানাস একটি মারাত্মক রোগ যে রোগের কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে অথবা শরীরের নিদিষ্ট কোনো অংগে সঙ্গক্রমিত হয়ে তা কেটে ফেলতে হতে পারে।
আর ডাক্তার এসব রোগের প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে রোগীর শরীরে এইসব ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করে এবং রোগ ছড়ানোর আগেই জীবানু ধ্বংস দেয়।

কুকুর কামড় এড়াতে কী করবেন?
- অচেনা কুকুরের কাছে যাবেন না।
- কুকুরকে খাবার দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
- কুকুরকে নাড়াচাড়া করবেন না।
- শিশুদের কুকুরের কাছ থেকে দূরে রাখুন।
মনে রাখবেন: কুকুরের কামড় একটি গুরুতর সমস্যা। তাই কুকুর কামড়ালে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।