গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি যে রোগটি আমরা প্রত্যেকেই জীবনে কমবেশি ভুগে থাকি।
এটি একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেকেরই দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় সমস্যা সৃষ্টি করে। খাবারের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস, বাইরের খোলামেলা অসুস্থকর খাবার বেশি পছন্দ করা। শারীরিক চাপ এবং অন্যান্য কারণে এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। যদিও ওষুধের মাধ্যমে এর প্রাথমিক চিকিৎসা করা যায়, তবে প্রাকৃতিক উপায়েও এর সমাধান সম্ভব। এই ব্লগ পোস্টে আমরা গ্যাস্ট্রিক দূর করার ৫টি প্রাকৃতিক উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

গ্যাস্ট্রিক কেন হয়?
গ্যাস্ট্রিক হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ হল:
- অতিরিক্ত অ্যাসিড: পেটে অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপন্ন হলে গ্যাস হতে পারে। এই অতিরিক্ত অ্যাসিড পেটের আস্তরকে জ্বালিয়ে দেয় এবং ব্যথা, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।
- হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (H. pylori) ব্যাকটেরিয়া: এই ব্যাকটেরিয়া পেটের আস্তরে সংক্রমণ ঘটিয়ে গ্যাস্ট্রিকের কারণ হতে পারে।
- অন্যান্য সংক্রমণ: ভাইরাস বা ছত্রাকজনিত সংক্রমণও গ্যাস্ট্রিকের কারণ হতে পারে।
- অনিয়মিত খাওয়া: খুব কম বা খুব বেশি খাওয়া, খাবার খাওয়ার পরপর শুয়ে পড়া, মশলাদার খাবার খাওয়া ইত্যাদি কারণে গ্যাস হতে পারে।
- স্ট্রেস: মানসিক চাপ গ্যাস্ট্রিকের একটি সাধারণ কারণ।
- অ্যালকোহল এবং ধূমপান: অ্যালকোহল এবং ধূমপান পেটের আস্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।
- কিছু ওষুধ: কিছু ধরনের ব্যথানাশক, অ্যাসপিরিন ইত্যাদি ওষুধ পেটের আস্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং গ্যাস্ট্রিকের কারণ হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ:
- পেটে জ্বালাপোড়া
- বমি বমি ভাব বমি
- পেট ফাঁপা
- অ্যাসিড রিফ্লাক্স
- খাবার হজমে সমস্যা
- বদহজম
- ওজন কমে যাওয়া
এবার আসি গ্যাস্ট্রিক দূর করার পাঁচটি প্রাকৃতিক উপায়েঃ
১. পানি পান:

আমরা সকলেই জানি পানির অপর নাম জীবন। শুধু পিপাসা মেটানোই নয়, পানি আমাদের শরীরের অনেক জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাতে ও পানি পানের গুরুত্ব অপরিসীম।
দিনে অন্তত 8-10 গ্লাস পানি পান করুন: খুব গরম বা খুব ঠান্ডা পানি না পান করে হালকা গরম বা ঠান্ডা পানি পান করুন।
খাবার খাওয়ার আগে এবং পরে পানি পান করুন: খাবার খাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি পান করলে পেট ভরে যাবে এবং আপনি কম খাবেন। খাবার খাওয়ার পর পানি পান করলে হজমে সাহায্য হবে।
খাবারের সাথে সাথে অতিরিক্ত পানি পান না করা: খাবারে শেষ করার সাথে সাথে যদি আপনি বেশি পরিমাণে পানি পান করেন তাহলে দেখা যাবে আপনি অস্বস্তিতে পড়ে যাবেন এতে করে খাদ্য হজমে সমস্যা হতে পারে।
পানি হলো গ্যাস্ট্রিকের একটি সহজ এবং প্রাকৃতিক সমাধান। তাই আজ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন এবং সুস্থ থাকুন।
২. আদা:

আদা হলো একটি অত্যন্ত কার্যকরী প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূরীকরণে সহায়তা করে। কারণ আদা তে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা পেটের জ্বালাপোড়া, বমি বমি ভাব এবং অন্যান্য অস্বস্তিকর উপসর্গ কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
আদা যেভাবে গ্যাস্ট্রিক কমাতে সাহায্য করেঃ
- জ্বালাপোড়া কমায়: আদার মধ্যে থাকা জিঞ্জারোল নামক উপাদান পেটের পেশীকে শিথিল করে এবং অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদন কমিয়ে দেয় যা জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।
- হজম শক্তি বাড়ায়: আদা হজম চক্রিকার উৎপাদন প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং খাবার ভালোভাবে হজম করতে সাহায্য করে।
- পেটের গ্যাস কমায়: আদা পেটের ভিতরে গ্যাস জমে থাকা রোধ করে এবং পেট ফাঁপার সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
- অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী: আদার রয়েছে চমৎকার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী যা হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি (H. pylori) ব্যাকটেরিয়াকে মারতে সাহায্য করে, এই ব্যাকটেরিয়া টি গ্যাস্ট্রিকের একটি প্রধান কারণ।
৩. পুদিনা:

পুদিনা পাতা হলো এমন একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান যা দীর্ঘদিন ধরে পেটের বিভিন্ন সমস্যায়, বিশেষ করে গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পুদিনার মধ্যে থাকা মেনথল নামক উপাদান পেটের আস্তরকে রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে রক্ষা করে এবং পেটের জ্বালাপোড়া কমায়। এছাড়াও, পুদিনা পাতার রস পেটের গ্যাস দূর করতে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
পুদিনা পাতা যেভাবে গ্যাস্ট্রিক দূর করতে সাহায্য করে:
পেটের পেশী শিথিল করে: পুদিনার মধ্যে থাকা মেনথল পেটের পেশীকে শিথিল করে এবং পেট ফাঁপা রোধ করে এবং পেটে ব্যথার অনুভূতি কমায়।
জ্বালাপোড়া কমায়: পুদিনা পেটের হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের পরিমাণ কমিয়ে জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।
হজম শক্তি বাড়ায়: পুদিনা পাতার রস পেটের রস নিঃসরণ বাড়িয়ে খাবার হজমে সাহায্য করে।
অ্যান্টিসেপটিক গুণ: পুদিনা পাতা পেটের অনেক ধরণের সংক্রমন দূর করতে বেশ ভালো ভূমিকা পালন করে।
৪ মধুঃ

মধু প্রাকৃতিতে পাওয়া বিশেষ একধরণের এন্টিবায়োটিক যা আমরা সকলেই পছন্দ করি। মধু কেবল মাত্র মিষ্টি একটি খাবারই নয়, এটি ্নানান রকম জটিল রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় মধু হতে পারে একটি দারুণ কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান।
গ্যাস্ট্রিকের জন্য মধু ব্যবহারের উপায়
- অ্যাসিড নিউট্রালাইজড: মধু পেটের অতিরিক্ত অ্যাসিড নিউট্রালাইজড করে এবং অতিরিক্ত জ্বালাপোড়া কমায়।
- হজম সহায়তা করে: মধু হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং পেটের ব্যথা কমায়।
- অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ: মধুতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ পেটের সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে।
- প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক: মধু একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক যা পেটের আলসার নিরাময়ে সাহায্য করে।
- খালি পেটে এক চামচ মধু: সকালে খালি পেটে এক চামচ মধু খেলে পেটের অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে থাকে
- গরম পানির সাথে মধু: গরম পানিতে মধু মিশিয়ে পান করলে পেটের ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া কমে।
- আদা ও মধু: আদা ও মধু মিশিয়ে চা তৈরি করে পান করলে গ্যাস্ট্রিকের উপশম পাওয়া যায়।
৫ কলা:

কলা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূরী করণে একটি দুর্দান্ত প্রাকৃতিক উপায় হতে পারে। কেন জানেন?
- অ্যাসিড নিরপেক্ষকরণ: কলায় পটাশিয়াম রয়েছে যা পেটের অতিরিক্ত অ্যাসিড নিউট্রালাইজড করতে সাহায্য করে।
- মৃদু প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড: কলা একটি মৃদু প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে এবং পেটের জ্বালাপোড়া কমায়।
- ফাইবারের উৎস: কলায় ফাইবার প্রচুর পরিমাণে থাকে যা হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- শরীরকে শক্তিশালী করে: কলায় ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে যা শরীরকে শক্তিশালী করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
কলা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে একটি দুর্দান্ত প্রাকৃতিক উপায় হতে পারে। কেন জানেন?
- অ্যাসিড নিরপেক্ষকরণ: কলায় পটাশিয়াম রয়েছে যা পেটের অতিরিক্ত অ্যাসিড নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে।
- মৃদু প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড: কলা একটি মৃদু প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে এবং পেটের জ্বালাপোড়া কমায়।
- ফাইবারের ভালো উৎস: কলায় ফাইবার প্রচুর পরিমাণে থাকে যা হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- শরীরকে শক্তিশালী করে: কলায় ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে যা শরীরকে শক্তিশালী করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
কীভাবে কলা খাওয়া উচিত:
অপরিপক্ক কলা পেটে অস্বস্তি বাড়াতে পারে তাই পাকা কলা খাওয়া উচিত। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে একটি কলা খেলে পেটের অ্যাসিড দূর হয়ে যায়। এছাড়াও কলা দিয়ে মুড়ি কিংবা ছাতু মাখিয়ে খেতে পারেন। কলাকে দুধের সাথে মিশিয়ে খেলেও ভালো ফল পেতে পারেন।