নাকা গুহা: The Unsolve mystery 404

5/5 - (1 vote)

নাকা গুহা থাইল্যান্ডঃ আমাদের পৃথিবী হাজারো রহস্যে ঘেরা, এর কিঞ্চিৎ আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়েছে যার মধ্যে বেশীর ভাগই আবার রহস্যের আড়ালে রয়ে গেছে। সৃষ্টি জগতের সেরা হবার কারণে আমাদের মধ্যে অজানাকে জানার ও বোঝার অদম্য এক কৌতুহল জন্মগত ভাবেই বিদ্যমান। তাই আমরা অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছি অজানাকে জানার। সেই প্রচেষ্টা তেই আমরা সকলে নিজেদের ভিতরকার ভ্রমণ পিপাসু মানুষ্টিকে খুজে পাই।

তবে এত কিছুর পরেও অনেক কিছুই আমাদের জানার বাইরেই রয়ে গেছে। আমাদের পাশের দেশ থাইল্যান্ডেই রয়েছে এই রহস্যময় ও অনেক পুরোনো এই গুহা নাকা গুহা। যার গঠন শৈলী অনেকটা প্রাগৈতিহাসিক যুগে পৃথিবীর বুকে দাপিয়ে বেড়ানো বিশালাকার কোনো সাপের মতই। প্রথম দর্শনে অনেকেই একে সাপ বলে ভূল করে বসতে পারেন।

এখন আসুন জানা যাক এই রহস্যময় গুহার ব্যাপারে আমরা মানুষের কতটুকু জানি এবং বিজ্ঞান কি বলে। এটি কি সৃষ্টিকর্তার োনো খেয়ালী সৃষ্টি নাকি কোনো বিশালাকার সাপের পাথরে পরিণত হওয়া দেহাবশেষ।

নাকা গুহার অবস্থানঃ

এশিয়ায় থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের প্রদেশ বুয়েন কান এর অন্তর্গত ফু ল্যাংকা ন্যাশনাল পার্ক এ নাকা গুহাটির অবস্থান, এটি স্থানীয়দের কাছে নগা গুহা নামেও পরিচিত।

গঠনশৈলীর দিকে খেয়াল করলে দেখা যায় এই গুহাটিতে এমন কিছু পাথর ও খনিজ পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে যা অনেকটা প্রাচীন যুগের লাভা এবং ম্যাগমা জাতীয় পদার্থ দ্বারা তৈরী। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বের করেছেন গুহাটি একসময় সমুদ্র সমতলের কাছাকাছি কিংবা সমুদ্রের নিচে ছিলো বেশ কিছু খনিজ পদার্থ বিজ্ঞানীদেরকে উক্ত সিদ্ধান্তে আসতে সাহায্য করেছে।

নাকা গুহা কেবলমাত্র তার অদ্ভুত ভূতাত্ত্বিক গঠনের জন্যই নয়, বরং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য সমাহার হিসেবেও পরিচিত। গুহার অভ্যন্তরে পাথরের বিচিত্র গঠন, স্ট্যালাক্টিট এবং স্ট্যালাগমাইটের জটিল নকশা প্রকৃতির এক অদ্ভুত কারুকাজের মতোই মনে হয়। এজন্য অনেক প্রকৃতিপ্রেমি এবং টুরিস্ট অনেক দূর দূরান্ত থেকে এই নাকা গুহা দেখার জন্য ভীড় করে।

নাকা গুহার প্রাথমিক বিবরণঃ

নাকা গুহা বাইরে থেকে যতটা আকর্ষণীয় ভিতরের অবস্থা আরও রোমাঞ্চকর। লম্বায় প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই গুহাটি এবং বেশ দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে গুহার কাছে যেতে হয়। পথটি এতই দুর্গম যে গুহার ভেতরে প্রবেশ করতে হলে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টার পথ অতিক্রম করে যেতে হয় পায়ে হেটে। গুহার ভেতরে প্রবেশ করার পর, বিভিন্ন আকৃতির এবং আকারের পাথর গঠন দেখা যায় যা সচরাচয় অন্য কোথাও দেখতে পাওয়া যায়না।

গুহার ভেতরে ঢোকার পরে একটি অন্য রকম অনুভূতি হতে পারে, এই গুহাটি প্রস্থে প্রায় ৩০ মিটার লম্বা। অন্যন্য প্রাকৃতিক গুহার তুলনায় এটিকে বেশ বড়সড়ই বলা যায়। সবচেয়ে আশ্চর্য জনক হলো গুহাটি আবিষ্কারের পর থেকে আজ অবধি দাঁড়িয়ে আছে আগের মতই অক্ষত অবস্থায়।

এবং গুহার বাইরের অবয়বটি অনেকটা বিশালাকার সাপের মতো বলে খমের নামক গোত্রের লোক জনের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান হিসাবে বিবেচিত হয় যা প্রকৃতির অদ্ভুত সৃষ্টির প্রমাণ।

গুহার ভেতরে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দৃশ্য হল বিশাল সাপের আকৃতির পাথর গঠন, যা স্থানীয় লোককাহিনীতে বর্ণিত নগার মতো দেখতে।

নাকা গুহা নামকরণ ইতিহাসঃ

নাকা গুহা নাম করণের পিছনে একটি লোককথা প্রচলিত রয়েছে যা স্থানীয়দের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এই লোককথার পিছনে গুহার গঠন বেশ দায়ী কারণ গুহা টির আকৃতি অনেকটা সাপের মতো।

এছাড়াও এই লোককথায় বলা হয় যে গুহার ভেতরে একটি বিশাল সাপের আকৃতির পাথর গঠন রয়েছে, যা নগা নামে পরিচিত একটি পৌরাণিক সাপের মতো দেখতে। এই পৌরাণিক সাপ হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায়শই পানি ও বৃষ্টির দেবতা হিসেবে পূজিত হয়। তাদের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তারা এই সাপটিকে অথবা সাপের আকৃতির পাথর টিকে বিশেষ ভাবে সমীহ করে থাকে তাই এই গুহাটিকে।

এছাড়াও নাগা নামে একটি প্রাচীন আদিবাসি গোষ্ঠি রয়েছে যারা এই লোককথা ও ধর্মবিশ্বাস কে মেনে চলে। বিশেষ করে ভারত এবং মায়ানমারে এই নাগা আদিবাসিদের দেখা পাওয়া যায়।

ভূতাত্ত্বিক গঠন ও গবেষণাঃ

নাকা গুহার ভূতাত্ত্বিক গঠন বিজ্ঞানীদের জন্য এক আকর্ষণীয় গবেষণার বিষয়। রহস্য ঘেরা এই গুহাটিকে ঘিরে রয়েছে নানান মতবাদ।

এই গুহা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে, এর পাথরের গঠন কীভাবে এত বিচিত্র হয়ে উঠেছে, এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিভিন্ন গবেষণা চলছে। গুহার ভেতরে পাওয়া বিভিন্ন খনিজ পদার্থ এবং জীবাশ্মের অবশেষ গবেষকদের জন্য মূল্যবান তথ্য প্রদান করে।

তবে অনেকের মতে এই গুহাটি প্রাগৈতিহাসিক কালের জলস্থলে রাজত্ব করে বেড়ান বিশালাকার সরিসৃপ টাইটানোবোয়া অথবা এর কাছাকাচি কোনো সাপের দেহাবশেষ যা বিশেষ কোনো কারণে জমে পাথরে পরিণত হয়েছে।

তবে এই ধারণা পুরোপুরি ভূল বলে জানিয়েছেন গুহাটির গবেষকেরা। এটি কেবলমাত্র পাথর ও খনিজ পদার্থের সমাহারে তৈরী। ও দেখতে অনেকটাই সাপের মতো বলে লোকসমাজে এই ধারণা তৈরী হয়েছে বলে জানা যায়।

এছাড়াও খমের গোত্রের লোকেরা নাকা গুহার সাপের আকৃতিকে নাগরাজা বলেও সম্ভোধন করে থাকে যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সাপের রাজা।

নাকা গুহা পর্যটকদের জন্য আকর্ষণঃ

প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য নাকা গুহা একটি অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান। প্রকৃতিপ্রেমী এবং অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হবার মূল কারণ হচ্ছে গুহাটির গঠন প্রণালী।

দৈর্ঘ্যের প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা হবার কারণে এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম একটি গুহায় পরিণত হয়েছে। তবে গুহাটিতে প্রাকৃতিক বাতাস চলাচলের সমস্যা থাকার কারণে খুব কম পর্যটকই গুহার বেশী ভিতরে প্রবেশ করেন।

নাকা গুহার ভেতরে প্রবেশের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিতে হয় এবং অভিজ্ঞ গাইড সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। গুহার অন্ধকারে হেঁটে যাওয়া এবং পাথরের বিচিত্র গঠন উপভোগ করা এক অনন্য অভিজ্ঞতা। গুহার ভিতরে থাকাকালীন আপনার মনে হতে পারে আপনি প্রাচীন কোন ঐতিহাসিক শহরে অবস্থান করছেন।

ধর্মীয় বিশ্বাস

স্থানীয় খমের গোত্রের লোকেরা নাকা গুহার অবথিত সাপ সদৃশ্য অবয়বকে তাদের বৃষ্টির দেবতা হিসেবে পুজা করে থাকে। এছাড়াও তারা নাগা দেবতাকে মনুষ্য জগত ও পরলোক জগতের মধ্যকার সেতু বন্ধন মনে করে থাকেন।

নাকা গুহাকে স্থানীয়রা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে গভীরভাবে সমীহ করে থাকে। স্থানীয় লোকেরা এটা বিশ্বাস করে যে গুহার ভেতরের বিশাল সাপের আকৃতির পাথর গঠনটি তাদের দেবতা নাগার প্রতিকৃতি এবং এটি একটি পবিত্র স্থান। এছাড়া তারা মনে করেন যে এটি নগা নামে পরিচিত একটি পৌরাণিক সাপের আবাসস্থল।

স্থানীয় লোকেরা প্রতি বছর নভেম্বর মাসে গুহায় একটি বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যেখানে তারা তাদের বৃষ্টির দেবতা নগাকে সন্তুষ্ট করতে তার পূজা করে এবং তার কাছ থেকে আশীর্বাদ প্রার্থনা করে।

এ সময়টিতে নাকা গুহায় গেলে তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করা যায় এবং পর্যটকদেরও বিশেষভাবে সমাদর করা হয়।

নাকা গুহা ভ্রমণের সেরা সময়ঃ

নাকা গুহা সাধারণ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত তবে এখানে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে বিশেষ একটি রুটিন ফলো করতে হবে কারণ নাকা গুহায় একদিনে সরবচ্চ ৫০০ জন অতিথিদের প্রবেশের অনুমতি দেয়।

আপনি চাইলে বর্ষার সময় বাদে প্রায় বছরের যে কোন সময়ই নাকাগুলার ভ্রমণ করতে পারেন। তবে বছরে বিশেষ কিছু সময় রয়েছে যেগুলোতে আপনি নাকাগুলো ভ্রমন করতে চাইলে বিশেষ সুবিধা পেতে পারেন।

নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি: এই সময়টিকে থাইল্যান্ডে শীতকাল হিসেবে ধরা হয়। তবে আমাদের দেশে যেরকম কনকনে শীত পড়ে এবং ঠান্ডায় কষ্ট হয় সে তুলনায় এখানকার শীতকাল খুবই হালকা। তাপমাত্রা আমাদের তুলনায় আরামদায়ক ও স্বাচ্ছন্দ্যকর থাকে এবং বৃষ্টিপাতও কম হয়। এই সময়টি গুহা ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।

কেন নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি সেরা সময়?

আবহাওয়া: এই সময় আবহাওয়া স্বচ্ছন্দ্যকর থাকে, তাই গুহার ভেতরে এবং বাইরে ঘুরতে বের হওয়া সহজ হয়।

ভিড় কম: বর্ষাকালের পরে পর্যটকদের সংখ্যা কম থাকে, ফলে গুহায় ভিড় কম থাকে। এতে করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগে নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়।

প্রকৃতির সৌন্দর্য: শীতকালে প্রকৃতির সৌন্দর্য অন্যরকম হয়ে থাকে। গুহার আশেপাশের পরিবেশও দেখার মতো হয়ে ওঠে।

মার্চ থেকে মে: এই সময়টি থাইল্যান্ডে বসন্তকাল হিসেবে পরিচিত। বসন্তকালে থাইল্যান্ডে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং আর্দ্রতাও বেড়ে যায়। তবে গুহার ভেতরে তাপমাত্রা সবসময় প্রায় একই থাকে বলে বেশ শীতল ভাব অনুভূত হয়।

নাকা গুহা ভ্রমণের অনুপযুক্ত সময়ঃ

জুন থেকে অক্টোবর: এই সময়টি সাধারণত থাইল্যান্ডে বর্ষাকাল। এই সময় বেশ ভারী বৃষ্টিপাত হয় এবং পরিবেশে আর্দ্রতাও অনেক বেশি থাকে। তাই এই সময় গুহা ভ্রমণের জন্য তেমন একটা উপযুক্ত সময় নয়। কারণ মাঝে মাঝে বৃষ্টির কারণে গুহার ভেতরে পানি জমে যেতে পারে এতে করে দুর্গম পথ আরও পিচ্ছিল হয়ে চলাচল কঠিন হয়ে যায়।

তাই এসময়ে ভ্রমণে আইন গত বাধা না থাকলেও বিশেষ ভাবে নিরাপত্তা গ্রহণ ও জীবনের ঝুকি নিতে হতে পারে। তাই বর্ষাকালে ভ্রমণ না করাই ভালো।

নাকা গুহা ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রঃ

পোশাক:

  • হালকা ও শ্বাসপ্রশ্বাসযোগ্য পোশাক: গুহার ভেতরের পরিবেশ সাধারণত গরম থাকে, তাই হালকা ও শ্বাসপ্রশ্বাসযোগ্য পোশাক পরা উচিত। আপনি চাইলে বিভিন্ন পোর্টেবল মিনি ফ্যান ও সাথে আনতে পারেন।
  • লম্বা প্যান্ট এবং হাতা: গুহার ভেতর পাথর বা অন্যান্য ধারালো জিনিস থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য লম্বা প্যান্ট এবং হাতা পরা উচিত। এছাড়াও বিভিন্ন জাতের মাকড়সা এবং পোকার কামড়ের হাত থকেও সুরক্ষা পাবেন।
  • জুতা: স্লিপার বা স্যান্ডেলের পরিবর্তে স্নিকার্স বা ট্রেকিং শু পরা উচিত। গুহার ভেতর শেওলা জমে পিচ্ছল হতে পারে, তাই ভালো গ্রিপযুক্ত জুতা খুবই জরুরি।

অন্যান্য জিনিস:

গুহা পরিদর্শন করার জন্য ভালো শারীরিক সক্ষমতা এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যেমন টর্চলাইট, পানি এবং খাবার নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।

পানি: শুধু এখানেই নয় যেকোনো জায়গায় ভ্রমণের জন্য সাথে করে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নিয়ে যান। গুহার ভেতরে নিশ্চিত ভাবেই পান যোগ্য বিশুদ্ধ খাবার পানি পাওয়া যাবে না।

খাবার: ভ্রমণে অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা এড়াতে হালকা খাবার যেমন ফল, শুকনো মুড়ি ইত্যাদি নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এতে করে খাবারের সোর্স নিয়ে আপনাকে চিন্তায় পরতে হবেনা।

টর্চ: গুহা কিংবা অন্ধকার গিরিপথে ভ্রমণের সময় বারতি সতর্কতা হিসেবে নিজস্ব আলোর উৎস যেমন লাইট সাথে রাখা ভালো কারণ গুহার কিছু অংশে আলোর ব্যবস্থা নাও থাকতে পারে, তাই টর্চ নিয়ে যাওয়া ভালো।

ক্যামেরা: বর্তমানে ক্যামেরা যেন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি মুহূর্ত ধরে রাখতে ক্যামেরার জুড়ি নেই। তাই এই ভ্রমণকে স্মরণীয় করতে এবং গুহার সৌন্দর্য ধরে রাখতে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।

মোবাইল ফোন: বিশেষ প্রয়োজনে জরুরি ক্ষেত্রে যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়া উচিত। তবে একথা এখন বলাই বাহুল্য যে আমাদের সকলের সাথেই মোবাইল ফোনের ব্যবহার ওতপ্রোত ভাবে জড়িত রয়েছে। তবুও ভ্রমণেরে সময় আগেভাগেই যেখানে যাচ্ছেন সেই জায়গা সম্পর্কে সাম্যক ধারণা নেয়ার চেষ্টা করা এবং যদি সম্ভব হয় সেই জায়গার আশেপাশে পরিচিত কেউ আছেন কিনা যদি থাকে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে ভ্রমণের অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা এড়ানো সম্ভব হবে।

প্রাথমিক চিকিৎসা কিট: যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে কিঙ্গবা অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা মানুষের নিত্য সঙ্গী, তবে প্রয়োজনে সব সময় সব জায়গায় ডাঃ অরহবা চিকিৎসার ব্যবস্থা নাও থাকতে পারে। তাই বিপদ আপদে প্রাথমিক চিকিৎসা করার জন্য একটি ছোট প্রাথমিক চিকিৎসা কিট নিয়ে যাওয়া ভালো।

ব্যাগ: ভ্রমনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের প্রয়োজনীয় ছোট ছোট জিনিস নিজেই বহন করা। সবকিছু বহন করার জন্য একটি ছোট ব্যাগ নিয়ে যাওয়া উচিত। এখন বাজাররে বেশ ভালো ফিচার স্বমৃদ্ধ ক্যারিং ব্যাগ পাওয়া যায়।

নগদ টাকা: প্রযুক্তি উন্নত হলেও সবখানে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা নাও থাকতে পারে এটাই স্বাভাবিক। তাই যখন যেখানে প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য কিছু নগদ টাকা সাথে রাখা উচিত। যদিও ডিজিটাল মাধ্যমকেই মানুষ বেশী প্রাধাণ্য দিচ্ছে আজকাল।

গুহার ভেতরে ধূমপান এবং মদ্যপান নিষিদ্ধ। এছাড়াও, গুহার ভেতরের পাথর গঠনগুলো স্পর্শ করা উচিত নয়, কারণ এতে পাথরগুলোর ক্ষতি হতে পারে।

স্থানীয় প্রশাসনে যোগাযোগঃ বিপদে আপদে অথবা বিশেষ প্রয়োজনে স্থাণীয় পুলিশ প্রশাসন এবং ইমারজেন্সি এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের কন্টাক নাম্বার রাখা ভ্রমনের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা বুদ্ধিমানের কাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

নাকা গুহা ভ্রমণে অতিরিক্ত টিপস:

স্থানীয় গাইড নিন: থাইল্যান্ডে নাকা গুহার আশেপাশের এলাকার স্থানীয় কোনো গাইডের সাহায্য নিন। কারণ স্থানীয়রা গুহার সম্পর্কে এর ইতিহাস এবং অন্যন্য গুরুত্বপূর্ণ কথা এবং গুহা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবেন এবং নিরাপদে ঘুরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।

এছাড়াও একজন স্থানীয় গাইড আপনাকে আশেপাশের অসাধু ব্যক্তি যারা টুরিস্টের থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র ও টাকা পয়সা হাতিয়ে নেবার চেষ্টা করে তাদের থেকে নিরাপত্তা দিতে পারবেন। এবং গাইড পছন্দের ব্যাপারে অবশ্যই লাইসেন্স প্রাপ্ত গাইড নেয়ার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

গুহার ভেতরে সাবধানে চলাচল করুন: অনেক সাবধানতা অবলম্বন করার মধ্য অন্যতম আরেকটি বিষয় হলো নাকা গুহায় অবস্থান কালীন গুহার ভিতরের পরিবেশ আমাদের আশেপাশের চির চেনা থান গুলোর চাইতে আলাদা হতে পারে এবং গুহার ভেতর পাথর গুলো পিচ্ছল হতে পারে, তাই সাবধানে চলাচল করুন।

গুহার দেয়ালে কিছু লেখা বা আঁকা নিষেধ: নাকা গুহায় প্রবেশের পরে অনেকেই হয়তো দেখে থাকবেন এখানে সেখানে সতর্কীকরণ বার্তা দিয়ে লেখা রয়েছে গুহার দেয়ালে কিছু লেখা বা আঁকা নিষেধ। এরকম লেখা দেখলে আমাদের উচিত নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী কোনো প্রকার কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার। নতুবা পরিবেশ নষ্ট হবার পাশাপাশি আমাদের অনাকাঙ্ক্ষিত অর্থদণ্ড অথবা জরিমানা দিতে হতে পারে।

এছাড়া গুহার দেয়ালে আকা বা কোনো ক্ষতি সাধন করা হলে অত্যন্ত প্রাচীন একটি স্থানের ইতিহাস নশট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তাই গুহার দেয়ালে আকা অথবা কোনো কিছু করা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।

পরিবেশের যত্ন নিন: গুহার পরিবেশকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করুন। খাদ্য সামগ্রীর খোসা যেখানে সেখানে ফেলা এবং বিশেষ করে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন জাতীয় কোনো ধরনের আবর্জনা ফেলে না যান এ দিকে বিশেষ ভাবে যত্নবান হোন।

নাকা গুহা কে নিয়ে যে ধরনের গবেষণা হচ্ছেঃ

নাকা গুহা

ভূতাত্ত্বিক গবেষণা: এই গুহাতে অবস্থিত পাথরের গঠন, বয়স, এবং সৃষ্টির প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভূতাত্ত্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। এই গবেষণার মাধ্যমে পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানা যায়। গবেষকেরা কার্বন ডেটিং নামক বিশেষ এক পদ্ধতিতে গুহাটির বয়স নির্ধারণ করেন। তারা জানান গুহাটির বয়স অনেক পুরোনো এবং এটি তৈরী হয়েছে পাইলোস্টেনিয়ান যুগের কাছাকাছি সময়ে।

জীববৈচিত্র্য গবেষণা: গুহাটি যদিও পরযটকের জন্য উন্মুক্ত তথাপি গুহার অন্ধকারে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণী, ছত্রাক, এবং ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে গবেষণা চলছে। আশা করা যায় এই গবেষণার মাধ্যমে নতুন কোনো অজানা প্রজাতির আবিষ্কার হতে পারে এবং জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে।

জলবিজ্ঞান গবেষণা: গুহার ভেতরে থাকা জলের গুণাগুণ, উৎস, এবং প্রবাহ সম্পর্কে গবেষণা করা হয়। সেখানে দেখা যায় ভূগর্ভ হতে একটী পানির প্রবাহ সর্বদা গুহাটির মধ্যে বিদ্যমান। উক্ত পানি গবেষণার মাধ্যমে পৃথিবীর পানির চক্র এবং ভূগর্ভস্থ জলের গতিবিধি সম্পর্কে আরও জানা যায়।

পুরাতত্ত্বিক গবেষণা: গুহার ভেতরে প্রাচীন মানুষের বসবাসের কোনো নিদর্শন আছে কি না, তা খুঁজে বের করার জন্য পুরাতত্ত্বিক খনন কাজ চালানো হয়। এই গবেষণার মাধ্যমে মানুষের অতিত কি রকম ছিলো এবং এই দুর্গম স্থানে আসলেই কোনো প্রাচীন গোষ্ঠির বসবাস ছিলো কিনা তার সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

স্থানীয় লোককথা ও সংস্কৃতি গবেষণা: নাকা গুহা স্থানীয় লোককথায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এই লোককথা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে গবেষণা করে মানুষের সাংস্কৃতিক ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের সকলের ধারণা আরোও বিস্তৃত হয়ে ওঠে।

নাকা গুহা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তাঃ

গবেষণার গুরুত্ব

  • বিজ্ঞানের উন্নতি: নাকা গুহা সম্পর্কিত গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন বিজ্ঞান শাখায় নতুন জ্ঞান অর্জন করা সহজতর হতে পারে। কারণ নাকা গুহার পরিবেশ ও প্রাকৃতিক গঠন আমাদের সকলের কাছেই এখনোও অজানা।
  • পরিবেশ সংরক্ষণ: গুহার পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রহস্য জানার মাধ্যমে গুহাকে আরও ভালভাবে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
  • পর্যটন উন্নয়ন: গুহা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার মাধ্যমে পর্যটকদের জন্য আরও আকর্ষণীয় তথ্য প্রদান করা যাবে এতে করে পর্যটকেরা নাকা গুহা সম্পর্কে আগ্রহী হবে এবং পর্যটন শিল্পকে আরও সুসংগঠিত করা যেতে পারে এর ফলে থাইল্যান্ডের নাকা গুহার মাধ্যমে তারা তাদের ইকোনোমি উন্নতি করতে পারবে বলে আমি মনে করি।
  • স্থানীয় সম্প্রদায়ের উন্নয়ন: গুহা সম্পর্কিত গবেষণার মাধ্যমে স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা উন্নয়নে সহায়তা করা যায়। যেমন নাকা গুহা সম্পর্কে স্থানীয়দের জ্ঞান কে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে ট্যুর গাইডের চাকুরীতে নিযুক্ত করা যাবে যার মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করার মতো কাজ করা সম্ভব হবে।

নাকা গুহা রক্ষায় চ্যালেঞ্জঃ

কেবল নাকা গুহাই একমাত্র স্থান নয় যেটি মানুষের কারনে হুমকির মুখে রয়েছে। আরও অনেক প্রাকৃতিক স্থানের মত নাকা গুহা তেও পর্যটক আসার কারণে পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু হয়েছে।

মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকায় গুহার ভিতরে অবথান কৃত প্রানীরা তাদের আবাসস্থল হারিয়ে বসেছে। এছাড়াও গুহার বাইরের পশুপাখি ও প্রানীরা এলাকা থেকে দূরে সরে গেছে বলে জানা যায়।

মানুষের ব্যবহার্য আবর্জনা ও প্লাস্টিকের ব্যবহারের ফলে নাকা গুহার ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স হুমকির মুখে পড়েছে। এর পাশাপাশি প্রতিবছর কিছু সংখ্যক মানুষ বিষাক্ত সাপ অথবা অন্যান্য প্রানী দ্বারা ক্ষতির মুখে পতিত হয়। এ বিষয়ে বিশেষ সবোঢনত অবলম্বন করা জরুরী।

উপসংহারঃ

নাকা গুহা থাইল্যান্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণ এবং এটি প্রকৃতির অদ্ভুত সৃষ্টির একটি উদাহরণ। গুহার ভেতরের বিশাল সাপের আকৃতির পাথর গঠন এবং স্থানীয় লোককাহিনী পর্যটকদের মনে একটি দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রাখে। যে কেউ একবার এই স্থানে গেলে সহজে ভূলে যেতে পারেনা। ভ্রমণ মানুষকে সাময়িক প্রাশান্তি এনে দেয়। কারণ প্রাত্যহিক জীবনে আমাদের চিরাচরিত যান্ত্রিক নিয়মের বাইরে গেলে আলাদা একটি অনুভুতি তৈরী হয়। আমাদের মাঝে শিশূ সুলভ বৈশিষ্ট গুলো প্রাকাশ পায়।

যদি আপনি প্রকৃতির অদ্ভুত সৃষ্টি এবং স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহী হন, তাহলে নাকা গুহা পরিদর্শন করার জন্য থাইল্যান্ড ভ্রমণ করতে পারেন। তবে, গুহা পরিদর্শন করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়া এবং স্থানীয় গাইড নিয়োগ করা ভালো। বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নয়নে খুব সহজেই বাংলাদেশ থেকে যে কেউ থাইল্যান্দদে ভ্রমণ করতে পারবেন নামমাত্র কিছু অর্থ ব্যয় করে। আমাদের এশিয়া মহাদেশের অন্তর্গত হবার কারণে স্বল্প সময়েও চাইলে ঘুরে আসতে পারেন নাকা গুহাতে।

Leave a Comment