মাংকিপক্স – 1 deadly virus

2/5 - (1 vote)

মাংকিপক্স হলো করোনা মহামারীর পরে অপেক্ষাকৃত কম ভয়ংকর আরেকটি ভাইরাস, যা ইতিমধ্যে কিছু কিছু দেশে অনেকের দেহে আক্রান্ত হয়েছে। আশংকা করা হচ্ছে এটি যদি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে এটি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

মাংকিপক্স একটি বিরল জেনেটিক রোগ যা প্রাথমিকভাবে বানর এবং গরীলা দের মধ্যে ছড়ায়। প্রথম দিকে এটি আফ্রিকা মহাদেশের কিছু অংশে পাওয়া যেত। তবে, সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাংকিপক্স ভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা যায় এ রোগটি আমাদের পরিচিত জলবসন্ত বা গুটি বসন্তের মতোই হয়ে থাকে। এটি বেশ সংক্রামক যা শারীরিক মিলন এবং বেশি ঘনিষ্টতা ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

মাংকিপক্স কিভাবে মানুষের মাঝে ছড়ালোঃ

মাংকিপক্স রোগটি প্রথম দেখা যায় বানর আর গরিলার মধ্যে। অনেক বানরপ্রেমী কিংবা গরীলা শিকারীরা চিড়ায়াখানায় পরিদর্শনের জন্য বানর ও গরীলা শীকার করে থাকেন। এছাড়াও আফ্রিকান কিছু আদিবাসী জনগোষ্ঠী খাবার জন্য বানর শিকার করে থাকে।

এভাবে বানর এবং আক্রান্ত অন্যান্য প্রানী থেকে মানুষের মধ্যে ভয়ংকর ও বিরল এই রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে।

এক পরিসংখানে দেখা যায় পৃথিবীর প্রায় ১২ টি দেশে এই রোগটির ভাইরাস ৮০ জনেরও বেশি মানুষের দেহে সনাক্ত করা হয়েছে। সংক্রমিত ১২ টি দেশের মধ্যে ৯টি দেশই ইউরোপিয়ান দেশ এবং বাকি ৩টি দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া।

ইউরোপের যে ৯টি দেশে মাংকিপক্সের ভাইরাস পাওয়া গেছে সেগুলো হচ্ছেঃ ফ্রান্স, ইতালী, সুইডেন,বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, পর্তুগাল , স্পেন ও যুক্তরাজ্য।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা আরো জানায় এই সংক্রমণ আরো ৫০ জনের মধ্য ছড়িয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে আক্রান্ত ব্যাক্তিরা কোন দেশের তা জানা যায়নি।

এই সংক্রমণ টি বেশ অস্বাভাবিক বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের কারণ এ রোগটি যেসব দেশে সংক্রমিত হয়েছে সেসব দেশের পরিবেশ কিঙ্গবা ভৌগলিক অবস্থান ভেদে সেসব দেশে ছড়ানোর কথা নয়। উক্ত রোগটি সাধারণত মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশেষ ভাবে আফ্রিকায় দেখা যেতো। কিভাবে রোগটি ছড়ালো তার রহস্য উদ্ঘাটনের জোর প্রচেষ্টা চালোনো হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।

এশিয়া মহাদেশে মাংকিপক্সঃ

খুবই সম্প্রতি মাংকিপক্স সম্পর্কে আরেকটি তথ্য প্রকাশ পেয়েছে আর তা হলো এশিয়া মহাদেশেও নতুন ৩ জনের দেহে মাংকি পক্স ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। আক্রান্ত ৩ জনই পাকিস্তানের নাগরিক বলে জানা যায়।

ভারত ও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সংক্রমণের কোনো খবর পাওয়া জায়নি। তবে ভালো খবর যেটি তা হচ্ছে এই মাংকিপক্স সাধারণ ভাবে মানুষের মাঝে ছড়ায়না। এটি এক জনের দেহ থেকে অন্য দেহে ছড়াতে গেলে অনেকটা সময়ের জন্য খুব কাছাকাছি থাকতে হবে।

এজন্য বিশাল সংখ্যায় এসব জনবহুল দেশে এই রোগটি তেমন আতংকের কারন নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

মাংকিপক্সের লক্ষণঃ

মাংকিপক্স

মাংকিপক্সের লক্ষণ গুলো সাধারণত গুটী বসন্তের মতই। হাল্কা জ্বরের সাথে সারা শরীরে গুটি বসন্তের মতো ফুসকুড়ি দেখা যায়। এরপর পানি সমেত থাকা এই ফুরকুড়ি গুলো ফেটে গিয়ে আক্রান্ত জায়গায় ঘা এর মতো হয় যা কিছুদিন স্থায়ি হয়।

অনেক যন্ত্রণা দায়ক বিধায় অনেকের সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। সারা শরীরে ভীষণ ব্যাথা হয়ে থাকে এবং চুলকানোর মতো যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়।

মাংকিপক্সের চিকিতসাঃ

যদিও মাংকিপক্সের নিদিষ্ট কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি তবে গুটিবসন্তের ভাইরাসের সাথে এর ডিএনএর ৮৫% শতাংশ মিল রয়েছে।

এতে করে গুটী বসন্তের টিকা নিলেই তা মাংকিপক্সের বিরুদ্ধেও কাজ করে থাকে।

এছাড়া বিশেষ কিছু উপায় অবলম্বন করলে এই রোগটি ছড়ানো বন্ধ করা যেতে পারে।

মাংকিপক্সের বিস্ময়কর আচরনঃ

বিজ্ঞানীরা এরোগের একটী দিক সম্পর্কে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তা হলো এই রোগটি আগে কারো দেহে পাওয়া গেলে তার সাথে পশ্চিমা কিংবা আফ্রিকার সম্পর্ক খুব সহজেই সনাক্ত করা যেতো।

তবে এবার এমন কিছু মানুষের মাঝে তা পাওয়া যাচ্ছে যাদের সাথে পশ্চিমা অথবা আফ্রিকার কোনো রকম সংযোগ নেই। এবং যারা স্পংক্রমিত হচ্ছে তাদের এই সংক্রমন কিভাবে হচ্ছে তা কোনো ভাবেই বলা যাচ্ছেনা।

মাংকিপক্সের সম্ভাব্য ধারণাঃ

এসব রোগ যাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হচ্ছে তাদের বিরাট একটি অংশ সমকামিতার সাথে সম্পর্কিত ।

দেখা যাচ্ছে তারা বেশির ভাগই সমকামী পুরুষ। এবং সমকামী অথবা উভকামী পুরুষের মধ্যে এই রোগটি ছড়ানোর প্রবণতা দেখে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। এই রোগটী ছড়াচ্ছে অবাধ যৌনতার কারণে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের যৌনাংগের আশেপাশে থেকে গুটি দেখা দিচ্ছে আর তা ক্রমেই সারা শরীরে ছড়ীয়ে পড়ছে।

এছাড়াও হতে পারে আক্রান্ত কারো সাথে ঘনিষ্টতার কারণে ত্বকের কাটা জায়গা, চোখ অথবা নাক মুখের মাধ্যমেও আক্রান্ত হতে পারে যে বিষয়টি এখন অব্দি পরিষ্কার নয়

বিশেষ সাবধানতা সংক্রান্ত বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সংস্থা বলে “যৌনতা হতে পারে এই রোগটি ছড়ানোর প্রাধাণ মাধ্যম তবে এটিই একমাত্র মাধ্যম নয়। দেশের কিছু কিছু ক্লিনিকের স্বাস্থ্য কর্মী দেরকে গুটি বসন্তের টীকা দিয়ে দেয়া হয়েছে,

মাংকিপক্স একটি ভাইরাস জনিত রোগ। যা মূলত মানব দেহের ডিএনএ কে টার্গেট করে। এটি ধীরস্থির প্রজাতির একটি ভাইরাস সমৃদ্ধ রোগ। যা করোণার মত এতো সহজে মিউটেশন করতে পারেনা । এবং অন্যান্য ফ্লু জাতীয় রোগের মত বিস্তার লাভ করতে পারেনা।

তাই এই রোগটী নিয়ে চিন্তার বিশেষ কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সুস্থ্য থাকুন এবং যে কোনো বিষয়ে আপ টু ডেট থাকতে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ!

Leave a Comment